
রহস্যময় পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা এবং তার অনেক কিছুই রহস্যময়। আবিস্কারের সীমাবদ্ধতায় এর মধ্যে অনেক কিছুই আমাদের অজানা। অজানা কে জানার পথে হাটতেই এবার আমরা পৃথিবীর অন্যতম বিষয় ভ্যাটিকান সিটির গুপ্তপথ রহস্য উন্মোচন করবো। ভ্যাটিকান সিটির গোপন সুড়ঙ্গ আর পাতাল শহরের কিংবদন্তি নিয়ে জানবো আজ।
পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় যার গুরুত্ব বিশাল। সেই ভ্যাটিকান সিটির মহিমান্বিত গির্জা আর বিশাল লাইব্রেরি আমাদের পরিচিত। কিন্তু কী হবে যদি বলি, এই ভ্যাটিকান সিটির নিচেই লুকিয়ে আছে এক সুবিশাল গোপন জগতের অস্তিত্ব? এক জালের মতো ছড়িয়ে থাকা সুড়ঙ্গপথ, যা হয়তো প্রাচীন রহস্য আর অজানা গল্পে ভরা? আজ আমরা ডুব দেবো ভ্যাটিকানের সেই মাটির গভীরে।
ভ্যাটিকান সিটি, পোপের আবাসস্থল এবং ক্যাথলিক বিশ্বের কেন্দ্র। এর প্রাসাদ, যাদুঘর আর সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা সারা বিশ্বের মানুষকে মুগ্ধ করে। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এক অদ্ভুত গুজব প্রচলিত আছে। ভ্যাটিকানের ঠিক নিচে নাকি রয়েছে এক সুবিশাল ভূগর্ভস্থ পথচক্র। এই পথগুলো নাকি ভ্যাটিকানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা, এমনকি রহস্যময় প্রাচীন গ্রন্থাগারের গোপন কক্ষগুলোর সাথেও সংযুক্ত! এটি কি কেবলমাত্র একটি লোককথা, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো ঐতিহাসিক সত্য?
ইতিহাসবিদ এবং প্রত্নতাত্ত্বিকরা বহু বছর ধরে এই রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করছেন। ভ্যাটিকান সিটির ভূগর্ভে আসলে রয়েছে প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের অনেক কাঠামো এবং সমাধি। বিশেষ করে, সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার নিচে যে নেক্রোপলিস বা প্রাচীন সমাধিস্থল আবিষ্কৃত হয়েছে, তা এর ভূগর্ভস্থ ইতিহাসের এক ঝলক মাত্র। এই নেক্রোপলিসের গভীরে, সেন্ট পিটারের সমাধির নিচ দিয়েও কিছু অপ্রকাশিত পথ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এই পথগুলো কি আরও গভীরে ছড়ানো এবং কোনো অজানা গোপন কক্ষে নিয়ে যায়? নাকি এগুলি শুধুই প্রাচীন সমাধির অংশ? প্রশ্নগুলো আজও অনুত্তরিত।
ভ্যাটিকান যদি এই গোপন সুড়ঙ্গপথগুলো সত্যিই থেকে থাকে, তাহলে এর উদ্দেশ্য কী ছিল? ইতিহাস বলছে, মধ্যযুগে এবং রেনেসাঁর সময়, পোপদের নিরাপত্তার জন্য অনেক সময়ই পালানোর পথ বা গোপন করিডোর তৈরি করা হতো। যেমন, পাসেত্তো ডি বোরগো নামে একটি উঁচু প্রাচীরঘেরা গোপন পথ রয়েছে, যা ভ্যাটিকানকে ক্যাসেল সান্ত অ্যাঞ্জেলোর সাথে সংযুক্ত করে। এটি পোপদের জরুরি অবস্থায় পালানোর জন্য ব্যবহৃত হতো। তাহলে, মাটির নিচের এই পথগুলো কি একই ধরনের নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল?
আরেকটি জনপ্রিয় তত্ত্ব হলো, এই পথগুলো হয়তো ভ্যাটিকানের গোপন মহাফেজখানা বা লাইব্রেরির অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। ভ্যাটিকান লাইব্রেরিতে এমন অনেক প্রাচীন দলিল, পুঁথি এবং জ্ঞান সংরক্ষিত আছে যা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। এমন তত্ত্বও প্রচলিত আছে যে, ভ্যাটিকানের কাছে এমন কিছু প্রাচীন জ্ঞান বা ঐতিহাসিক সত্য লুকানো আছে যা সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করা হয়নি। এই গোপন পথগুলো কি সেই সব অজানা জ্ঞান বা তথ্যের দিকে নিয়ে যায়? অথবা, যুদ্ধের সময় মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য এগুলো ব্যবহৃত হত? এই প্রশ্নগুলোই রহস্যকে আরও গভীরে নিয়ে যায়।
ভ্যাটিকান ভ্যাটিকানের মাটির নিচে বিস্তৃত এই গোপন জগত আবিষ্কার করা কিন্তু সহজ নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল প্রক্রিয়া, কারণ এর ওপরে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা। তাই ইচ্ছা থাকলেও চাইলেই ব্যাপকভাবে খননকাজ চালানো সম্ভব নয়। রাডারের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ ম্যাপিং করা হলেও, এসবের সম্পূর্ণ চিত্র এখনো অজানা
ভ্যাটিকান সিটির এই ভূগর্ভস্থ গোপন পথগুলো কি নিছকই কিংবদন্তি, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরও গভীর কোনো সত্য? সময়ের পরতে পরতে হয়তো এই রহস্যের জট একদিন খুলবে। হয়তো একদিন আমরা জানতে পারব, এই পাতাল পথগুলো সত্যিই কতটা বিস্তৃত এবং কী কী গোপনীয়তা ধারণ করে আছে। ভ্যাটিকানের প্রতিটি পাথরের নিচে, প্রতিটি ইটের গভীরে যেন লুকিয়ে আছে এক অজানা অতীত, যা আজও আমাদের কৌতূহল বাড়িয়ে তোলে।
মন্তব্য করুন