
ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখা যায়, নানা সময় ভিন্ন ভিন্ন কারণে রাজনীতিবিদদের দিকে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে মানুষ ডিম ছুড়ে মেরেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও ডিম ছোড়ার প্রবণতা দেখা যায়।
হাঁস বা মুরগির ডিম খাওয়ার টেবিলের একটি সাধারণ খাবার হলেও রাজনীতি ও প্রতিবাদের মঞ্চে প্রতীকী অস্ত্র হিসেবে এটির বেশ পরিচিতি রয়েছে। অভিযোগভিত্তিক বিক্ষোভে, দলীয় বিরোধী শক্তির প্রতি ক্ষোভ দেখাতে বা আদালত প্রাঙ্গণে আসামিদের উপর প্রতিবাদ জানাতে ডিম নিক্ষেপের ঘটনা বার বার ঘটছে। মধ্যযুগে বন্দিদের ওপর জনসম্মুখে ডিম নিক্ষেপ করা হতো বলে লোকমুখে জানা যায়; লিখিত সূত্রে ডিম নিক্ষেপের প্রথম কাহিনি পাওয়া যায় ১৮শ শতকের গোড়ায়। ১৮০০ দশকের সময় আয়েল অফ ম্যান দ্বীপে মেথোডিস্টদের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা নথিভুক্ত আছে। আর ১৮৩৪ সালে মার্কিন শহর কনকোর্ডে দাসত্ববিরোধী বক্তা জর্জ হোয়াইটারকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয়েছিল।
এই বিষয়ে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি’র রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু গেলম্যান বলেন, প্রতিবাদ করতে গিয়ে খাবার ছুড়ে মারার কারণ হতে পারে- এটা সস্তা, সহজলভ্য এবং দৃশ্যমান। খাদ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট বোনাপিটিট ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি ব্যাখ্যা করেন, “টমেটো হালকা, নিক্ষেপ করা সহজ, দামও কম। ছুড়ে মারার পর ফেটে গেলে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি জাগায়। ডিমের ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই; ফেটে গিয়ে বিচ্ছিরি পরিস্থিতি তৈরি করে। খাবার ছুড়ে মারাকে সাধারণত অহিংস প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হয়। যেমন- পুলিশের দিকে ঢিল ছুড়লে, তারা গুলি করতেও পারে। তবে ডিম বা টমেটো মারলে গুলি করাটা পুলিশদেরকে ‘ফুলিশ’ হিসেবেই চিহ্নিত করা হবে। তাই আমার মনে হয় এই খাবার ছুড়ে মারার একটা প্রতীকী মূল্য রয়েছে।”
খুব পেছনে না তাকিয়ে ২০০১ সালে ব্রিটেনের ঘটনা দেখা যায়, যেখানে উপ-প্রধানমন্ত্রী জন প্রেসকটকে একজন তরুণ কৃষক ডিম নিক্ষেপ করলে প্রেসকট নিজেই ঘুষি মেরে প্রতিক্রিয়া দেখান। মুহূর্তটির ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিম ছোড়ার রাজনীতি নিয়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
২০১১ সালে আফগানি বিক্ষোভকারীরা জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ইরানি কন্স্যুলেটদের দিকে ডিম নিক্ষেপ করে। ২০১৩ সালে লন্ডনে একদল বিক্ষোভকারী, প্রয়াত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের কফিন ডিম দিয়ে পরিপূর্ণ করার হুমকি দেয়। যদিও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়াতে চরম নিরাপত্তার কারণে সেটা তারা করতে পারেনি।
সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে বহনকারী প্রিজন ভ্যানে ডিম ছুড়ে মারেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্যরা। ডিম ফেটে গাড়ির সামনের কাচ ঘোলা হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন